প্রিয়তমা




প্রিয়তমা



অমি: হ্যালো রাকা|
রাকা: বল শুনছি।
অমি: আমি না তোমাকে খুব ভালোবাসি।
রাকা: বাসনা ছাই।
অমি: এই দেখনা, তোমার ফটোটা এখন আমার হাতে। তোমার দিকে তাকিয়েই কথা বলছি। তুমিই আমার সব রাকা।
রাকা: সে আমি খুব জানি।
অমি: বিশ্বাস করছ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি-প্রানের চেয়েও বেশি
রাকা: না..
অমি: কিযে বল, রাকা.. রাকা
রাকা: শুনছি, বল।
অমি: তুমি আমাকে ভালোবাসো না?
রাকা: আমি কি কখনো বলেছি?  
অমি: না,তবে মাঝে মাঝে অন্য ছেলেদেরসাথে ঘোরোতো তাই বলছিলাম।
রাকা: ঘুরলেই কি প্রেম হয়ে যায়? জাষ্ট বন্ধুত্ব, আর কিছু নয়।
অমি: তা ঠিক, তবে আমি ওসব বন্ধুত্ব-টন্ধুত্বে বিশ্বাসী নয়।
রাকা: সেটা তোমার ব্যাপার। তবে পছন্দ না হলেও মানিয়ে নেয়াই উত্তম।
অমি: তুমি বলছো?
রাকা: হ্যাঁ।
অমি: চেষ্টা করব।
রাকা: সেটাই ভালো।
অমি: যা হোক, একবার ক্যাম্পাসে আসবে?
রাকা: এই ভরদুপুরে!
অমি: খুব প্রয়োজন।
রাকা: তাহলে টেলিফোন রাখছি।
অমি: রাখো।
............
রাকা: ইস্ শুধু তোমার জন্যে এই ভরদুপুরে রান্না ফেলে আসলাম।
অমি: সে আমি জানতাম। তো ডাইনিং- খেলেই পারতে।
রাকা: পোষাইনা। এবার বল কেন এত জরুরী তলব।
অমি: তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল তাই।
রাকা: ধেৎ, তুমি একটা কি যেন!
অমি: দাড়িয়েই কথা বলবে?
রাকা: বসতে বলেছো?
অমি: চল ঘাস গালিচায় বসি।
রাকা: ওখানেতো প্রচন্ড রোদ্র। গরমে মরে যাব যে।
অমি: আশ্চার্য কি জান রাকা- গরমকালে আমরা রোদ্রকে ঘৃনা করি আর গাছের ছায়াকে সম্ভাষণ জানাই- ভালোবাসি। অথচ শীতের দিনে এই রেৌদ্রের প্রত্যাশায় থাকি- কুয়াশাকে ধিক্কার দিই। বৃক্ষের অকৃপন উদার ছায়াকে অভিষাপ দিই, অবহেলা করি। মানুষ কি আজব তাই না?
রাকা: তোমার হেয়ালি আমি বুঝি না।
অমি: আমি জানি তুমি বোঝার চেষ্টাও করোনা।
রাকা: হয়তো তাই।

******************************************************
রাকা: তোমার হাতে কিসের প্যাকেট?
অমি: সেদিন ফোনে বললেনা যে মার্কেটে নতুন ডিজাইনের দারুন থ্রি পিচ এসেছে। আমার সাথে কিনতে যাবে বলেছিলে।
রাকা: সেতো আমার কেনারকথা ছিল, তোমার নয়।
অমি: তবুও কিনলাম।
রাকা: কতটাকা নিল?
অমি: নাইবা শুনলে।
রাকা: পেলে কোথায়?
অমি: বাবাকে লিখেছিলাম- ফর্ম ফিল-আপ করতে দুই হাজার টাকা লাগবে। ব্যাস, পাঠিয়ে দিয়েছে।
রাকা: ফর্ম ফিল-আপের সময় টাকা পাবে কোথায়?
অমি: আবার কোন কৌশলে ম্যানেজ করে নেব।
রাকা: যাহোক, আমার জেন্যে অতগুলো টাকা অপচয় করার কোন প্রয়োজন ছিল না।
অমি: তুমি খুশি হবে তাই।
******************************************************
অমি: কী নোট করছো রাকা?
রাকা: সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে।
অমি: ওটা কি এখুনো আমাদের আছে!
রাকা: থাকবে না কেন?
অমি: সত্যি বলতে কি, আমরা দিন দিন আমাদের মূল্যবোধকে হারিয়ে ফেলছি।
রাকা: কিভাবে?
অমি: এই দেখনা-একটি দেশের কৃষ্টি, কালচার, মূল্যবোধ, সভ্যতা, ভব্যতা সে দেশের আবহাওয়া, ভূ-প্রকৃতি, পারিপাশ্বিকতার উপর নির্ভর করে। আর এ সবের প্রভাবেই সে দেশের মানুষের মন-মানষিকতা, আচার-আচরণ, চাল-চলন নির্ধারিত হয়।
রাকা: তা ঠিক।
অমি: যেমন পশ্চিমা দেশগুলোতে বার মাসের নয় মাস তুষারে ঢাকা থাকে। সুর্যের মূখ দেখা যাই না বললেই চলে এবং সে অনুযায়ী তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন, কর্মপদ্ধতি গড়ে ওঠে। তারা তুষারে প্রতাপে গরম মোটা কাপড় পরে।
এখন আমরা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বাস করে যদি ওদের মতো রাতদিন গরম কাপড় পরতে চাই তাহলে তো ঘামতেই হবে।
রাকা: রাইট। এজন্যই যার যা রূপ তার তেমন ভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত।
অমি: ঠিক বলেছ রাকা। আমাদেরকে আমাদের মতই গড়ে উঠতে হবে। এক্ষেত্রে ভদ্রতা, সৃজনশীলতা ইত্যাদির মাপকাঠি যদি কোট প্যান্ট হয় তাহলে সেটা হতে হবে আমাদের উপযোগী, গরমকে রোধ করার মতো।আর যখনই এর ব্যাত্যয় ঘটে তখনই বানরের মানুষ হওয়া বা কাকের ময়ুর হওয়ার মত অবস্থা হয়।
জান রাকা, আমরা ওদের হাল-ফ্যাশনকেই দেখি-ওদের কঠোর পরিশ্রমকে দেখি না, অথবা না দেখার ভান করি। ওরা যখন সময়ের প্রতিটি সেকেন্ডকে একনিষ্ঠভাবে কাজে লাগায়, আমরা তখন ওদের অঙ্গসজ্জায় বিলাসিতার কাছে সময়কে বিসর্জন দিই। আসলে আমরা আমাদের প্রতি কখনোই আন্তরিক না। আমরা আমাদেরকে চিনি না।
রাকা: হয়েছে, এতক্ষণ যা বললে, সেমিনারে বললে বুদ্ধিজীবি খেতাবে ভুষিত হতে।
অমি: ঠাট্টা নয় রাকা। এটাই এখন সত্যিকারের সত্যি।
******************************************************
অমি: রাকা, তুমিই আমার প্রিয়তমা।
রাকা: সিরিয়াসলি বলছ?
অমি: হ্যাঁ, রাকা।
রাকা: খুব সুখী বোধ করছি।
অমি: আমিও চাই তুমি সুখি হও।
রাকা: তাই, তাহলে সেদিন ক্লাস নোটটা দিলে না কেন?
অমি: কেন, দিয়েছিলামতো।
রাকা: ওটাতো দু’নম্বর।
অমি: কি যে বল। আমি কি তোমাকে দু’নম্বর নোট দিতে পারি।
রাকা: হ্যাঁ, পারো।
অমি: ভালোবাসার জনের সাথে কি ছলচাতুরী করা যায়?  
রাকা: যায়।
অমি: কেন?
রাকা: কারণ তুমি চাওনা আমি তোমার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করি। তোমার অহমে লাগে।
অমি: আশ্চার্য!
রাকা: কী ঠিক বলিনি?
অমি: কিছুটা ঠিক। তুমি আমার উপরে ভাবতে কেমন যেন প্রেষ্টিজ হ্যামপ্যারড্ হ্যামপ্যারড্ ফিল করি।
রাকা: একারণেই তুমি আমাকে দু’নম্বর নোট দিয়েছিলে। অথচ এটা না করলেও চলত।
অমি: না, চলত না।
রাকা: কারণ?
অমি: কারণ সেদিন তুমিও আমাকে দু’নম্বর নোট দিয়েছিলে। অস্বীকার কর?
রাকা: না করিনা। আমি জানি তুমি বুঝবে।
******************************************************
অমি: রাকা।
রাকা: শুনছি।
অমি: বিকালে লাইব্রেরীতে আসছ?
রাকা: আসলেই তো গল্প জুড়ে নোট করতে দেবে না।
অমি: আমি যখন লাইব্রেরী ওয়ার্ক করি তখন তুমিওতো তাই কর।
রাকা: তা বটে। আচ্ছা আমরা কেন এমন করি?
অমি: হয়তো আমরা কেউ কারো মঙ্গল চাইনা।  
রাকা: আমার তা মনে হয় না। প্রকৃত অর্থে তুমি আমি সকলেই একই লক্ষ্যে চক্রায়মান। আমাদের লক্ষ্য এক কিন্তু চলার পথ ভিন্ন। তাই আমাদের সম্পর্ক কখনো ভালোবাসার, কখনো ঘৃনার, কখনো স্বার্থের, কখনো ইর্ষার আবার কখনো প্রতিযোগিতার।
অমি: হয়তো তাই।
রাকা: যাক সে কথা। পাঞ্জাবী গায়ে কিন্তু তোমাকে দারুন স্মার্ট দেখাচ্ছে।
অমি: তুমি দিয়েছতো তাই।
রাকা: ধেৎ, আমি কি সেটা বলেছি?
অমি: আরে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।
রাকা: অনেক হয়েছে এবার আমাকে ফিরতে হবে। আগামীকাল পরীক্ষার কথা কি ভুলে গেছ?
অমি: পরীক্ষা কেমন দিচ্ছ?
রাকা: একদম বাজে।
অমি: আমিও।
=========*****===========*****===========*****===========*****=======
অমি: রাকা।
রাকা: বল।
অমি: লেখাপড়াতো শেষ হল।
রাকা: তো কি?
অমি: তোমাকে একটি কথা বলার ছিল।
রাকা: আমি জানি।
অমি: তুমি জানো!
রাকা: জানাই স্বাভাবিক নয় কি?
অমি: বিশ্বাস কর আমার কিছুই করার ছিল না।
রাকা: তাতো বটেই।
অমি: বাবা-মা জোর করে দিলেন। বোঝোইতো এত কষ্ট করে তারা আমাকে মানুষ করলেন। তাদের অবাধ্য হই কি করে?
রাকা: ঠিকই করেছ। গুরুজনের ভক্তি একটা মহান গুন।
অমি: তুমি ঠিক বলছো?
রাকা: অমি, তোমাকে একদিন বলেছিলাম- স্বার্থ এবং প্রতিযোগিতার পারস্পারিক সংঘাতে ভালোবাসা মলিন, বিবণ। আবার একথাও সত্যি, আমরা সবসময়ই ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করি। জীবনের কঠিন বাস্তবতার চাপে সেটা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতো বুকের পাজরে ঘুমিয়ে থাকে। অনুভূতিগুলো জমাটবদ্ধ লাভার মত শুকিয়ে নিস্প্রান থাকে।তবুও মানুষ ভালোবাসে এবং ভালোবাসর স্বর্গীয় সুখানলে দগ্ধ হতে ভালোবাসে। এটাই জীবন!!
অমি: ষ্ট্রেঞ্জ, ষ্ট্রেঞ্জ রাকা! তুমি খুব হাই থটের মেয়ে।
রাকা: বেশ বলেছ। এবার এই আংটিটা রাখ।
অমি: এটাতো আমি তোমাকে গিফ্ট করেছিলাম!
রাকা: হ্যা।সেদিন আংটিটা দেবার সময় বলেছিলে, এটা তোমার প্রিয়তমার জন্যে।কাজেই এটা তোমার বউ-এর আঙুলেই বেশি মানাবে।
অমি: তুমি কিছু মনে করোনিতো?
রাকা: আরে না।
অমি: এজন্যই আমি তোমাকে এখনও ভালোবাসি।
রাকা: থাক ওসব কথা। অমি তোমার জন্যে একটা জিনিস এনেছিলাম।
অমি: কি?
রাকা: নিমন্ত্রন কার্ড 
অমি: নিমন্ত্রন কার্ড!
রাকা: দুঃখিত অমি। আমি আর দেরি করতে পারছি না। গাড়ীতে আমার ডাক্তার অপেক্ষা করছে।এতক্ষণে মনে হয় খুব অভিমান করেছে।অভিমান করলে ও বড্ড জ্বালায়। বিয়েতে এসো কিন্তু ………।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post